যে হচ্ছেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টযে হচ্ছেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট

তাইওয়ান ঘিরে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের টানাপোড়েনের মধ্যেই সেখানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী শনিবার । তারা হলেন কুয়োমিনতাং( কেএমটি) পার্টির হো ইয়ু ইহ এবং তাইওয়ান পিপলস পার্টির( টিপিপি) কো ওয়েন- জে । হো ইয়ু ছিলেন নিউ তাইপে সিটির জনপ্রিয় মেয়র এবং সাবেক পুলিশপ্রধান । দেশটির বর্তমান

অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি তাইওয়ানের স্বাধীনতার বিপক্ষে । আর টিপিপির কো ওয়েন ছিলেন তাইপের সাবেক মেয়র । ২০১৯ সালে তিনি দলটি প্রতিষ্ঠা করেন । যেসব ভোটার বড় দুটি রাজনৈতিক দলের ভূমিকায় বিরক্ত এবং নতুন কিছু চান, তাদের কাছে টানার চেষ্টা করছেন কো- ওয়েন । তবে চীন ইস্যুতে ডিপিপি এবং কেএমটির

তুলনায় তার দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন । কারণ, তিনি( চীনকে) প্রতিরোধ আবার চীনের সঙ্গে যোগাযোগও চান । তাইওয়ানের ৬৪ বছর বয়সী অজ্ঞিজ্ঞ রাজনৈতিক নেতা লাই চিং তে উইলিয়াম লাই হিসেবেও পরিচিত । প্রেসিডেন্ট পদে তিনি ক্ষমতাসীন স্বাধীনতাপন্থী ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টির( ডিপিপি) প্রার্থী হিসেবে

প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন । ২০২০ সালে তাইওয়ানের ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে তিনি একজন আইনপ্রণেতা ছিলেন । এ ছাড়া ২০১৭ ও ২০১৯ সালে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট সাই ইং ওয়েনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন । এর আগে দুই মেয়াদে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর তাইনানের জনপ্রিয় মেয়র ছিলেন তিনি । প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি

পূর্বসূরি সাইয়ের পথই কঠোরভাবে অনুসরণ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন । সাইয়ের নীতি হলো চীন থেকে বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড হিসেবে তাইওয়ানকে স্বাধীন একটি দেশ । তাই সাইয়ের নীতি কী হবে, তা আর বলার দরকার নেই । অথচ চীন ২ কোটি ৪০ লাখ জনগোষ্ঠীর তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখণ্ড হিসেবে বিবেচনা করে । প্রয়োজনে তাইওয়ানকে

জোরপূর্বক একীভূত করার হুমকিও দিয়ে রেখেছে বেইজিং । লাই রাজনীতিতে আসার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন চীনের কাছ থেকেই । তিনি তাইওয়ানের উত্তরাঞ্চলের একটি দরিদ্র গ্রাম থেকে উঠে এসেছেন । সেই গ্রামে ছিল কয়লাখনি । তার বাবা ছিলেন কয়লাশ্রমিক । তিনি যখন ছোট, তখনই তার বাবা মারা যান । এরপর তাঁর মা একাই ছয়

সন্তানকে বড় করেন । লাইয়ের মুখপাত্রের ভাষ্য, শৈশবে দেখা লাইয়ের দুঃখকষ্টই তাঁকে সুবিধাবঞ্চিত ও সংখ্যালঘুদের প্রতি সমব্যথী হতে শিখিয়েছেন । তিনি তাইওয়ানের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিসিন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন । পরে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জনস্বাস্থ্যের ওপর স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন । চার দশকের সামরিক

শাসন থেকে বেরিয়ে আসার এক দশক পর ১৯৯৬ সালে তাইওয়ানে প্রত্যক্ষ ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় । তখন থেকেই ডিপিপির প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন লাই । কিন্তু চীন যখন তাইওয়ানে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে জেতাতে দ্বীপটির উপকূলীয় সাগরে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে

ভয়ভীতি দেখাতে শুরু করে, তখন তাঁর মনে হয়েছে, তার নিজেরই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা উচিত । ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে লাই লিখেছেন, ‘ তাইওয়ানের গণতন্ত্রে অংশ নেওয়া আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে এবং যারা এই গণতন্ত্রকে নষ্ট করতে চায়, তাদের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে । ’এবারের নির্বাচনে লাইয়ের সঙ্গে থাকা মূল প্রতিদ্বন্দ্বী

অপর দুজন চীনঘেঁষা । জনমত জরিপে লাই কিছুটা এগিয়ে থাকলেও তিনি বিজয়ী হবেন, এটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না । একসময় তার দল তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে পেরেছিল । কিন্তু আট বছর ধরে ক্ষমতায় থাকলেও দলটি সেই আগের মতোই রয়ে গেছে । নতুন কিছু তেমন করতে পারেনি । সেখানে মূল্যস্ফীতি

যেভাবে হয়েছে, মানুষের বেতন সেভাবে বাড়েনি । অথচ বাড়িভাড়া বেড়েছে ব্যাপক । এ ছাড়া লাই তার দলের সিদ্ধান্তে অনড় থাকবেন । তার দল ২০২৫ সালের মধ্যে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দিতে চায় । এতে জ্বালানির দাম বাড়া নিয়ে সবার মধ্যে একধরনের ভীতি রয়েছে । এ ছাড়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেটি, তা হলো চীন

কখনো ডিপিপি সরকারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পর্ক স্থাপন করবে না বলে অনেকটা নিশ্চিত । লাই ২০১৭ সালে নিজেকে ‘ তাইওয়ানের স্বাধীনতার জন্য বাস্তববাদী কর্মী ’ হিসেবে অভিহিত করে চীনের ক্ষোভ উসকে দিয়েছিলেন । বেইজিংয়ের কর্মকর্তারা সম্প্রতি তাকে ‘ তাইওয়ানের স্বাধীনতার নিয়ে

মিথ্যাচারকারী ’ এবং ‘ চূড়ান্ত পর্যায়ের দুর্বৃত্ত ’ বলে অভিহিত করেছেন । তবে লাইয়ের মন্তব্য নিয়ে শুধু যে চীনই শঙ্কায় রয়েছে, এমনটা নয়- যুক্তরাষ্ট্রও আছে । লাই জিতে গেলে তাইওয়ান প্রণালিতে আরও উত্তেজনা ছড়াবে বলে আশঙ্কায় আছেন মার্কিন কর্মকর্তারা । লাইয়ের লাগামহীন কথাবার্তা কারণে যুক্তরাষ্ট্রের

এ আশঙ্কা অমূলক নয় । গত বছর তিনি বলেছিলেন, তিনি আশা করেন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট এমন কিছু করবেন, যাতে নজির ভেঙে যাবে এবং চীনও ফুঁসে উঠবে, আর তা হলো তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট একদিন ‘ হোয়াইট হাউসে ঢুকতে পারবেন ’ । যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের প্রতি প্রধান সমর্থক হলেও সে তুলনায় চীনের

সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক অনেক বেশি । ভোটে জিতলে লাইকে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে । কারণ, তিনি চাইবেন, তাইওয়ানের ভঙ্গুর সার্বভৌমত্ব শক্তিশালী হোক । এ কাজে একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র তাদের সহায়তা করতে পারে । তিনি চীনের ওপর থেকে অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতাও কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন । গত বছরের প্রথম ১১ মাসের

চিত্র দেখলে বোঝা যায়, তাইওয়ানের রপ্তানি আয়ের ৩৫ শতাংশ এসেছে চীনের মূল ভূখণ্ড ও হংকং থেকে । লাই আশাবাদী, তিনি ক্ষমতায় এলে তাইওয়ান অন্যান্য দেশের সঙ্গে আরও বাণিজ্য চুক্তি করতে পারবে এবং বিশ্বজুড়ে ‘ গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সঙ্গে অংশীদারত্ব আরও জোরদার করতে পারবেন । একই সঙ্গে

তিনি এও বলেছেন, প্রণালির ওই পারের শক্তির সঙ্গে আলোচনায় বসতে তিনি এখনো প্রস্তুত । অনেক তাইওয়ানবাসীর আশা, চীন হয়তো তাদের দেশের মানুষের ওপর থেকে তাইওয়ান সফরের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে । আর এর মধ্য দিয়ে দ্বীপটির অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে । কিন্তু লাই জিতলে তাইওয়ানকে ঘিরে চীনের হুমকি

চলতেই থাকবে । তাইওয়ান আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে । এ সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছেন বিরোধীরা । তাঁরা বলছেন, লাইয়ের হাতে ক্ষমতা গেলে তাইওয়ান হবে অনিরাপদ । লাই অবশ্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের চীনের পুতুল বলেই মনে করেন । তিনি বলছেন, চীনঘনিষ্ঠ দুজন ক্ষমতায় এলে চীনের ব্যাপক প্রভাব বাড়বে । আর এর ফলে তাইওয়ানের এত কষ্টে অর্জিত গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যাবে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *