Thistimebd.news

ভারতের অস্থিরতা কবলিত মণিপুরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বিরেন সিংয়ের বাড়িতে হামলা হয়েছে। উন্মত্ত জনতার একটি দল মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে।

তবে শনিবার রাতে এই ঘটনা যখন ঘটে তখন মুখ্যমন্ত্রী বিরেন বাড়িতে ছিলেন না। পরে রাতে আর তিনি বাড়িতে ফিরেননি বলে খবর ভারতীয় গণমাধ্যমের।

মণিপুরের জিরিবাম জেলায় মেইতেই জনগোষ্ঠীর নিখোঁজ ছয়জনের মৃতদেহ পাওয়ার পর উত্তেজনা শুরু হয়। এই নিহতদের মধ্যে এক নবজাতক ও দুই নারী আছেন। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ মেইতেইরা রাস্তায় নেমে আসে, তারা সরকারের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তোলে।

গত সোমবার রাতে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুক লড়াইয়ে কুকি সম্প্রদায়ের ১০ সশস্ত্র ব্যক্তি নিহত হন। ওই দিন থেকেই এই ছয়জন নিখোঁজ ছিলেন। পরে আট মাসের ওই শিশুসহ ছয়জনের লাশ জিরিবামের বারাক নদী থেকে উদ্ধার করা হয়।

রাজ্যটির পুলিশ কুকি সম্প্রদায়ের ওই নিহতদের ‘সশস্ত্র জঙ্গি’ বলে বর্ণনা করেছিল। কিন্তু কুকি সম্প্রদায়ের নেতারা জানান, নিরাপত্তা বাহিনী যে ১০ জনকে হত্যা করেছে তারা স্থানীয় গ্রামগুলোর স্বেচ্ছাসেবক পাহারাদার, তারা হামার নৃগোষ্ঠীর সদস্য। সশস্ত্র হামলা থেকে পাহাড়িদের গ্রামগুলো রক্ষার জন্য তারা টহল দিচ্ছিল।

এদিকে,মণিপুরের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী মেইতেইদের অধিকার আন্দোলনকারী গোষ্ঠী ‘কোঅর্ডিনেটিং কমিটি অন মণিপুর ইন্টিগ্রিটি’ (সিওসিওএমআই) রাজ্য সরকারকে ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়ে ‘সশস্ত্র জঙ্গি’ গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নিতে বলেছে।

সিওসিওএমআইয়ের মুখপাত্র খুরাইজাম অথৌবা বলেছেন, “রাজ্যের সব প্রতিনিধি ও এমএলদের একসঙ্গে বসে যত দ্রুত সম্ভব এই সঙ্কট সমাধানে কিছু সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। আমরা সব সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সিদ্ধান্তমূলক সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ভারত সরকার ও রাজ্য সরকারকে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছি। এই সময়ের মধ্যে তারা মণিপুরের জনগণকে সন্তুষ্ট করার মতো কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করলে জনঅসন্তোষের দায়দায়িত্ব তাদের বহন করতে হবে।

শনিবার উত্তেজিত মেইতেইরা মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির পাশাপাশি রাজ্যের আরও তিন মন্ত্রী ও ছয় এমএলের বাসভবনেও হামলা চালায়। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে। বিক্ষোভকারীরা এক এমএলের বাড়ি ভাংচুর করার পর তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

বাড়তে থাকা এসব সহিংসতার মুখে রাজ্য সরকার ইম্ফল পূর্ব, ইম্ফল পশ্চিম, বিষ্ণুপুর, থৌবাল ও কাকচিং জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করেছে। পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খেতে থাকা কর্তৃপক্ষ এ পাঁচটি জেলাসহ সাতটি জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত করেছে। গুজব ও সহিংসতা আরও ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে রাজ্যটির মুখ্য সচিব জানিয়েছেন।

২০২৩ সালের মে থেকে মণিপুরে সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই ও সংখ্যালঘু কুকি সম্প্রদায়ের মধ্যে দাঙ্গা চলছে। অর্থনৈতিক সুবিধা ও কোটা নিয়ে বিরোধ থেকে এ দাঙ্গার সূত্রপাত হয়।

মণিপুরের সনাতন ধর্মী মেইতেই জনগোষ্ঠী প্রধানত উপত্যকাগুলোতে বসবাস করে আর মূলত খ্রিস্টান কুকিরা বাস করে পাহাড়ে। ঔপনিবেশিক শাসনামলে ব্রিটিশরা প্রায় দুই ডজন পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীকে সমষ্টিগতভাবে কুকি নামে অভিহিত করতে শুরু করে।

মণিপুরে দুই জনগোষ্ঠীর আবাসভূমিকে একটি ‘বসতিহীন ভূখণ্ড’ দিয়ে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনী এই ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’টি পাহারা দিয়ে রাখে।

গত বছরের মে মাস থেকে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে এ পর্যন্ত অন্তত ২৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় ৩২ লাখ জনসংখ্যার মণিপুরের ৬০ হাজারেরও বেশি বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

One thought on “মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে হামলা”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *